Powered By Blogger

My Blog List

Popular Posts

স্বাগতম

আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি

Total Pageviews

Pages

Sunday, May 26, 2019






ফকির ইলিয়াস এর পাঁচটি কবিতা


প্রার্থনারত মানুষের মুখ


এর বেশি কী কিছু চাওয়া ছিল আমার!
এর বেশি কী গাইতে চেয়েছিলাম উপপাদ্য সঙ্গীত!
হাত তোলে যারা প্রার্থনা করে,
কিংবা শ্ঙ্খধ্বনি দিয়ে যারা সাজায় অর্চনা
আমি তাদের কাতারেই দাঁড়াতে চেয়েছি।
পাঠ'কেই ধ্যান মনে করে মগ্ন থেকেছি দুপুরের দক্ষিণে,
গীর্জার ছায়াঘেরা সবুজকে ডেকেছি কাছে।

আমাকে ভালোবেসেছে প্যাগোডার পাখিরা,
হাতের পরশ নিতে ওরা উড়িয়েছে পালক
আর বলেছে, মানুষ হে !
তুমি মানবতা নিয়ে বাঁচো,মহিমান্বিত হও!

তারপরও আমাকেই হত্যা করতে আজ ‌উদ্যত
মানুষেরই হাত-
আমার সেজতারত ছায়ার দাগ মুছে দিতে
এগিয়ে আসছে কালো ছায়া-
অথচ ওরা কি জানে না,
মানুষের প্রার্থনাশক্তিকে বধ করা যায় না-
মানুষের ভালোবাসার বিপরীতে,
  দাঁড় করানো যায় যায় কোনও ঘৃণার প্রাচীর।



মুদ্রিত জীবনের অমুদ্রিত তৃষ্ণাগুচ্ছ


'ইহা একটি মুদ্রিত ছোটকাগজ'- শব্দগুলো দেখার পরই আমি জেনে যাই
আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে এই গঞ্জে অনলাইন ভার্সনের কোনো অস্তিত্ব
ছিল না। ডিজিটাল ধ্বনি কন্ঠে নিয়ে কোনো কোকিল এখানে গাইতো না
গান। রিমিক্সড গীটার বাজিয়ে কেউ রুদ্ধ করে দিত না সানাইয়ের অপূর্ব
মিলনসন্ধ্যা। পরস্পরকে ভালোবেসে যারা হাত ধরাধরি করতো,তারা পরতো
না প্লাস্টিকের হাতমোজা। অথবা মাস্ক পরে আঁকতে চাইতো না নিভৃতের
চুম্বনদৃশ্য। অনেক কিছুই তখন মুদ্রিত ছিল। চাইলেই স্পর্শ করা যেতো
কাগজ ও কালির প্রকাশ।তাকালেই দেখা যেতো নিশ্বাসের নিশব্দ উঠা-নামা।
আমরা যারা ঐ গঞ্জে পাহারাদারের দায়িত্বে ছিলাম, তারা বাঁশি বাজিয়েই
হটিয়ে দিতে পারতাম রাতের তস্কর।এখন এখানে বহুমুখি শক্তির মহড়া হয়।
শান্তি কায়েমে নিয়মিত রাজসিক ঢাক-ঢোল বাজে। মুদ্রিত জীবনের অমুদ্রিত
তৃষ্ণাগুচ্ছ বুকে নিয়ে অসহায় কবি ভাবে, তাহলে কী আমি আরও বেশি
একাকী হয়ে যাবো !






ভাঙনের শব্দের মতো


শক্তিগুলো ঘুমিয়ে থাকে ভাঙনের শব্দের ভেতর।জলগুলো জমা হয়।অতিক্রম করে
যায় পাথরকে।পাথরের নিজস্ব কোনও দেশ না থাকায় ছড়িয়ে পড়ে যত্রতত্র।আর
যারা পাথর চেনে,তারা কেউ পরে নেয় আঙুলে।কেউ ছুঁড়ে দেয় নদীতে। নদীর
নীচে এপর্যন্ত যে পাথরগুলো জমে আছে-;তা মানুষেরই হাতে ছোঁড়া। অথবা বলা
যায় নিক্ষেপিত।
.
ভাঙনের শব্দের মতো পৃথিবীতে মধুর কোনো শব্দ নেই। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে
যারা এই দৃশ্য দেখেছে,কেবল তারাই বলতে পারবে,ওপারে জেগে ওঠা চরে ‌উড়ে
যে নিশান- তা একসময় কোনো মানুষের শবদেহ ঢেকে দেয়া অবশিষ্ট তুলোর
অংশ। কোনো অভিযান শেষ করা বীরের রক্তফুলকি।



জল ছিটানো ঘুম 


তন্দ্রা এবং তন্ত্রে কেটে গেছে কয়েকটি মহাকাল।
কয়েকলক্ষ পৌষের শীত, জুবুথুবু করে রেখেছে
পাখিদের জীবন। যেসব মানুষ পরিন্দার প্রতিবেশী,
তারাও বন্দী হয়ে পড়েছে আঁটোসাটো পলেস্তারার
ভেতর। থেমে যাচ্ছে প্রদক্ষিণরত সূর্য।

বিগত এমন ইতিহাস অস্বীকার করতে চাইছে
আমাদের ভালোবাসার সাম্পান। ঢেউ ভাঙছে
যে নদী- তাকে সাক্ষী রেখেই লিখতে চাইছে
জীবনের নতুন পরিচ্ছেদ।

মাটিতে জল ছিটাচ্ছে যে ঘুমময় চোখ, মানুষ
তার শুশ্রূষা চেয়ে করছে বিনম্র প্রার্থনা-
পুনরায় লিখিত হোক নতুন সূচিপত্র,
আবার উচ্চকিত হোক বলিষ্ঠ বাহু-
এমন বরণের গানে সুর তুলে, চাঁদের দিকে
না তাকিয়েই মধ্যরাতে বাড়ি ফিরছে
দীনহীন গায়েন।






ধ্বংস হোক দানবিক স্বর


যীশুর ভাস্কর্যে যে রক্তের দাগ লেগে আছে সেই রক্ত আমার,
মসজিদে সেজদারত অবস্থায় যাকে হত্যা করা হয়েছে,
তিনি আমার পিতা। মন্দিরের চারপাশে পড়ে থাকা
শবদেহগুলো সনাক্ত করতে করতে যিনি কাঁদছেন,
তিনি আমার মা।নদীভাঙনের শিকার হয়ে যিনি হারিয়েছিলেন
ভিটেসূত্র,ভালোবাসা এবং ভবিষ্যত।

প্রাতরাশ করতে গিয়ে যে শিশুটি আজ বোমার আঘাতে
নিহত হয়েছে, সে আমার আত্মজ!
বড়ই বিমূঢ় আমি আজ- বড়ই অসহায় এই পৃথিবীর কাছে

তবে কি খুনের বদলে খুন চাইবো আমি!
তবে কি হত্যার বদলে হত্যা করতে চাইবো এই প্রকৃতি!

বিষাদে আকাশ কেঁপে উঠছে। কাঁদছে- জল,নদী,দ্বীপ
কোথায় মানুষ আজ!কোথায় মানুষের মুষ্টিবদ্ধ হাত!
'ধ্বংসের কিনারে বসে'-যে কবি একদিন কেঁদেছিলেন
আমি তাঁর পদরেখার দিকে তাকাই। নিশ্বাস নিতে
ভুলে যেতে যেতে আবারও বলি, ধ্বংস হোক দানবিক স্বর-
পৃথিবী হে, তোমার শুদ্ধ ছায়া বিতরণে আমি পুনরায়
স্বেচ্ছাসেবক হতে চাই ।



Saturday, September 3, 2011

ফকির ইলিয়াস এর কবিতা


















আশ্চর্য ভোরের প্রতিভূ

------------------------
জনপদ ছেড়ে যাই। কাছে আসে আগরআকাশ। সুবাস
ছড়াতে শালুকস্রোতও মিলিয়ে যায় আমার পরাণে। আহা !
বাঁশীতন্ত্রে বাজা দিনের যৌবন, জানো তুমিও এখানে -এই
দীঘিপাড়ে জোতদার মেঘ খুব সহজেই তুলে রাখে বিবিধ
দেয়াল। আমি টপকাতে চাই।চলে যেতে চাই এই অভিমানী
নগর ছেড়ে অন্য লোকালয়ে। যেখানে কেবল বেদনা জাগে
আশ্চর্য ভোরের প্রতিভূ হয়ে।

প্রবাদ পিয়াসী এক পাহাড়ের কোলে
-------------------------------------
ধ্বনির দূরত্ব জেনে গুহাগুলো সারিবদ্ধ হয়। প্রলয় এসেছে ভেবে গা ঝাড়ে
পিপীলিকাগণ। শমন হবে কি জারী মৃত্যুর, ঘোর নিমজ্জন ! ভ্রমণ সম্পন্ন
হলে ঝিনুকেরা সমুদ্রে হারায়। পায় কি নতুন দিন, অথবা রাতের শঙ্খনাদ?
প্রবাদ পিয়াসী এক পাহাড়ের কোলে গিয়ে ভাবে। তবে কি গুহার রাজ্যে
পিপীলিকা একক সম্রাট ! বিরাট কর্তৃত্ব নিয়ে নিজেকেই রাজা মনে করে।
ফিরে তাকিয়ে ভাবে ,পাহাড়টা এতোই কি ছোটো ? দু'টো ডানাও নেই,
অথচ আমার। খামার মৌসুমে গজায় কি সুন্দর রঙিন পেখম ! ওম কাল
ভুলে গিয়ে পিপীলিকা এভাবেই নিজে। পাহাড়কে ধাক্কা দিয়ে হাই তুলে
মথুরা স্বরাজে !

মুখোশ ও মুগ্ধতা
-----------------
মাঝে মাঝে আমরা মুখোশ পরে থাকি। ভাবি নিজেদরকে লুকিয়ে রেখেছি !
বেশ !! নিজের তালিয়া নিজেই বাজাই। খাবি খাই অর্ধেক জলে আর অর্ধেক স্থলে। তৈরি করি নষ্ট কোলাহল। আর চেয়ে দেখি কে কে যোগ দিলো আমাদের কাফেলায় !
বড় আজিব আমাদের মন। মুহুর্তেই আঙুল উঁচিয়ে অস্বীকার করি নিজের অস্তিত্ব! কিংবা একধরনের প্রতিকুল প্রতিযোগিতায় নামি কোমরে গামছা বেঁধে i
হায় জীবন , হায় আমাদের ভাবনার মুন্ডুপাত !
আচ্ছা, মানুষ কতটুকু নগ্ন হলে নিজেকে খু -উ- ব সংস্কারবাদী কিংবা আধুনিক করতে পারে - তার কোনো বয়ান কি কারো জানা আছে ?
একবার এক বেদেনীর সাথে আমার সখ্যতা গড়ে উঠেছিল ! সেই বেদেনী
বিদায় বেলা বলেছিল - বাবুজি, আমরা সাপের খেলা দেখাই।সাপ আমাদের পোষ মানে। কিন্তু এই সমাজের সাপগুলোকে যদি পোষ মানানো যেতো ,
তবে হয়তো সমাজটা অন্য রকম হতো !
তার কথা আমি আজও শোনি । কানে বাজে ।
দেখি মুখোশ পরে আজ যারা নিরাপদ দুরত্বে থেকে বাণী শোনাচ্ছেন - তারা
আসলেই সর্প প্রজাতি।
বাগানের অচেনা পুষ্পের প্রতি তাদের মুগ্ধতার বড় অভাব।
তারা বাচালতায় ব্যস্ত । তার চেয়েও বেশী ব্যস্ত বগল বাজিয়ে খিস্তি খেউড়
আওড়াতে !
আর কুসুমাস্তীর্ণ প্রজন্মের পথে, বারবার কাঁটা ঢেলে দিতে !
#

Friday, September 2, 2011

তিনটি ছায়া


পৃথিবী প্রথম যেদিন আমার কাছে এসেছিল , আমি তাকে
উপহার দিয়েছিলাম তিনটি ছায়া,
একটি আমার, একটি শ্রাবণের আর আরেকটি .........

সে ছায়াটি কার ছিল, তা জানিয়ে তোমাকে এর আগেও
বহুবার লিখেছি প্রবন্ধ। নিবন্ধকার তার লেখার চৌহদ্দি
জানেন না, এমন ইঙ্গিতও ছিল আমার লেখায়, আর ছিল
আগামী শীতে আমাদের বাগানে পাপড়ি কুড়াবে যে পাখি
তার বিবরণ। কীভাবে প্রজাপতিগুলো পরস্পরের মাঝে
বিনিময় করবে প্রেমের ডানাপত্র।

আমি বিনিময়ে বিশ্বাস করি। কথার বিনিময়। কান্নার বিনিময়।
কালের বিনিময়।
জানি, তুমিও ধারণ করতে জানো, স্ফটিকের উজ্জ্বল কিনার।

যেদিন আমাদের দুঃখগুলো বড় হবে,
সেদিন তুমি সেই ছায়াতেই তার মায়াগুলোকে মিশিয়ে দিও।

মিডিয়ার কর্তৃত্ব , প্রতিমিডিয়ার মধ্যস্বত্বভোগীরা



নিউইয়র্ক থেকে এখন অনেকগুলো ফ্রি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের হয়। সাপ্তাহিক দর্পণ, দেশবাংলা, বাংলা টাইমস, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ, সাপ্তাহিক বর্ণমালা, সাপ্তাহিক আজকাল,সাপ্তাহিক দেশকন্ঠ, সাপ্তাহিক বিদেশ বাংলা এর মাঝে অন্যতম। এই কাগজগুলোর পৃষ্টা সংখ্যা ৩২ থেকে ৭২ পর্যন্ত। এগুলো নিউইয়র্কের বাঙালী মালিকানাধীন গ্রোসারি, বিপনিবিতান, মসজিদের করিডোর, রেস্তোরা, বিভিন্ন জনবহুল স্পটে রেখে যাওয়া হয়। প্রকাশের দিনই কাগজগুলো হাতে হাতে চলে।
যেহেতু বিক্রেতারা বিক্রী করে কোনো কমিশন পান না, তাই তারা এসব কাগজ নিয়ে মাথা ঘামান কিছুটা কম।
অন্যদিকে নিউইয়র্কে দেড় ডলার দামে বিক্রী হয় সাপ্তাহিক ঠিকানা । এই কাগজের পৃষ্টা সংখ্যা সপ্তাহে - ১৩২ থেকে ১৫২। ঢাউস সাইজের কাগজটি বহির্বিশ্বে একটা বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। এছাড়াও এখান থেকে - সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা, সাপ্তাহিক এখন সময়, সাপ্তাহিক পরিচয় ও সাপ্তাহিক বাঙালী - বের হয় নিয়মিত। এগুলোর পৃষ্টা সংখ্যা ৬৪ থেকে ৭২ । এগুলো বিক্রী হয় এক ডলার দামে।
বাংলাদেশের মতো বিদেশেও মিডিয়া , বিশেষ করে পত্রিকা প্রকাশ করার, পত্রিকার মালিক হবার একটা হিড়িক পড়েছে। এর কারণ কী ? কেন এই প্রতিযোগিতা ? এ প্রশ্ন গুলো আমাকে বেশ ভাবায়। বিদেশে দেখছি, ফ্রি এই কাগজগুলো সম্পূর্ণই বিজ্ঞাপণ নির্ভর। তারা পুরোই পরিচালিত হন পাতায় পাতায় বিজ্ঞাপণ ছেপে। হাঁ, এই সময়ে তা একটা ব্যবসাও বটে। এই যে মুনাফা লাভের ব্যবসা, মূলতঃ সেটাই এখন নিয়ন্ত্রণ করছে মিডিয়া জগত। তা দেশে কিংবা বিদেশেই হোক।
মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ আইন, কোনো গণতান্ত্রিক দেশের জন্যই শুভ নয়। আমরা জানি 'নিউইয়র্ক টাইমস' এর মতো কাগজে 'সকল সংবাদই ছাপার যোগ্য' এমন একটি কথা থাকলেও এই কাগজও সকল খবর ছাপে না। বিশেষ করে তাদের সমর্থিত গোষ্টী, গ্রুপ, এর বিপক্ষের অথবা স্বার্থ বিরোধী যদি হয়। তাহলে 'মত প্রকাশের স্বাধীনতা' কিংবা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এমন আপ্তবাক্যের মানে কী ?
মানে কিছুই নেই। আইওয়াশ এখন হয়ে উঠেছে গোটা বিশ্বেই কিছু কিছু মিডিয়ার মূল ঢাল-তলোয়ার। বাংলাদেশে তো বটেই, বিদেশেও এই কাজটি কড়ায় গন্ডায় রপ্ত করছেন কিছু কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা। তাদের আয়কর রেয়ায়েত কিংবা রুটি রুজির মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন মিডিয়া ব্যবসাকে।
বিশ্বের ধনী দেশগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখবো,কিছু কিছু মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণকারীরা বিশ্বে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জন্য মিডিয়ার মাধ্যমেই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ পরিচালনা করছে। প্রায় একই কাজটি করছে জঙ্গীবাদী, মৌলবাদী গ্রুপগুলোও।
বর্তমানে যে মনস্ত্বাত্বিক হামলা চালানো হয়, এর সূচনা হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় থেকে। এরপর সময়ের সাথে প্রচারের ধরন ও কৌশলে পরিবর্তন এসেছে ব্যাপকভাবে।ইন্টারনেট, ব্লগ, টিভির প্রতি ঘন্টার ব্রেকিং নিউজ এর নতুন সংযোজন। বর্তমানে বিশ্বের সর্বত্র বিশেষ করে পাশ্চাত্যে হাজার হাজার রেডিও-টিভি চ্যানেল চালু হয়েছে। ইন্টারনেট আবিস্কৃত হবার পর মনস্তাত্ত্বিক হামলা আরও বেশি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। যেমন ওসামা বিন লাদেন রেডিও ভাষণ দিয়েই তার মতবাদীদের চাঙা
করে রেখেছিলেন।বিভিন্ন লক্ষ্য হাসিলের জন্য মিত্র,শত্রু ও নিরপেক্ষ গোষ্ঠীগুলোর আচার-আচরণ, আগ্রহ, অনুভুতি ও চিন্তা-চেতনার উপর প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে প্রচার যন্ত্র ও অন্যান্য মাধ্যমকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী নিখুঁত ভাবে ব্যবহারের নামই হচ্ছে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ। বর্তমানে বিশ্বের অধিকাংশ বৃহৎ গণমাধ্যম পাশ্চাত্যের সরকারগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে এসব দেশ উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপর প্রভাব বিস্তারের জন্য মিডিয়াকে ব্যবহার করছে। যদিও তারাও বলছে , তাদের দেশে মিডিয়া পুরোপুরিই সরকারি প্রভাবমুক্ত !
।।দুই।।
ফিরে আসি আবার নিউইয়র্ক প্রসঙ্গে। এখানে মূল্যে বিক্রীত কোনো কাগজে একটি বিজ্ঞাপণ ছাপা হলে , ফ্রি কাগজগুলো পরদিনই ঐ বিজ্ঞাপণদাতার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তাকে তারা বার বার ফোন করে। ' ভাই , অমুক কাগজকে বিজ্ঞাপণ দিয়েছেন, আমাদেরকেও দিতে হবে।' শুরু হয় বোঝাপড়া। বিজ্ঞাপণ এর মূল্য নির্ধারণ। বিপত্তি যে নেই - তা নয়। কেউ বিজ্ঞাপণ না দিলে তার উপর , তার ব্যবসা প্রতিষ্টানের উপর খড়গও নেমে আসতে পারে ঐ মিডিয়ার পক্ষ থেকে। তাই বিজ্ঞাপণদাতা কিছুটা ভয় নিয়েই বিজ্ঞাপণ দেন স্থানীয় কাগজগুলোতে। প্রবাসে, এই যে মিডিয়াপেশী দেকানোর মানসিকতা তা অনেককেই হজম করতে হয়েছে, হচ্ছে। এই যে জিম্মি করে রাখার প্রচেষ্টা , তা এসে পড়েছে বিদেশেও। অন্যদিকে নিউইয়র্কে কিছু মিডিয়া মালিক আছেন যারা অন্য পেশায় মোটা অংকের ডলার কামাই করেন। তাদেরকে বড় এমাউন্ট আয়কর দিতে হয় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারকে। তাই তারা 'পত্রিকা প্রকাশের খাত' অলাভজনক কিংবা ক্ষতি হচ্ছে –এমনটি দেখিয়ে আয়কর রেয়ায়েত নেন। ঘরের ডলার ঘরেই থেকে গেল। আর তা দিয়ে কম্যুনিটিতে করা গেল কিছুটা তুঘলকি ! আপাততঃ এই আইডিয়া ও উদ্দেশ্য নিয়েই নিউইয়র্কে চলছে মিডিয়াসেবা।
এই যে মিডিয়া দিয়ে দুনিয়া নিয়ন্ত্রণের ক্ষুদ্র কিংবা বৃহৎ চেষ্টা এর মদদ আসছে কীভাবে ? সেদিকে একটি উদাহরণ দেয়া যাক। ধরা যাক মিডিয়া মোগল রুপার্ট মার্ডক এর কথা। রুপার্ট মার্ডক এমন একজন মিডিয়া সম্রাট-যাকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য মার্কিন মুল্লুক এবং ব্রিটেনে প্রনীত হয়েছে বিশেষ আইন। একজন ব্যক্তি একটি দেশের মিডিয়া জগতের কতটুকু মালিক হতে পারবেন-তার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে এই আইনে। রুপার্টকে কখনো নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। তিনি রাজনীতি করেছেন রাজনীতিকদের সঙ্গে। আর তিনি গণ মাধ্যমের প্রভাব খাটিয়ে গড়েছেন সীমাহীন প্রভাব প্রতিপত্তি।
রুপার্ট মার্ডকের জন্ম অস্ট্রেলিয়ায়, ১৯৩১ সালে। মাত্র ২২ বছর বয়সে তিনি মালিক হন পৈত্রিক ছাপাখানা বাণিজ্যের। তারপর আর থেমে থাকেনি তার অগ্রযাত্রা। আকষ্মিক বন্ধ হয়ে যাওয়া নিউজ অব দ্যা ওয়ার্ল্ড ছিল তাঁর মিডিয়া জগতের মাত্র ক্ষুদ্র একটি অংশ। আধুনিক বিশ্বের সাংবাদিকতার জৌলুস এবং প্রভাব বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তিনি সৃষ্টি করেছেন অনন্য রেকর্ড। ইয়েলো জার্নালিজমের জন্যও তিনি কখনো কখনো নিন্দীত হয়েছেন প্রচন্ডভাবে। যে ব্যক্তি গণমাধ্যম দিয়ে বিশ্বের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকতাকে একটি সম্মানজনক অবস্থানে তুলে এনেছেন-তিনি এখন নিজেই শিরোনাম হয়েছেন বিশ্ব মিডিয়ায়।টেলিফোনে আঁড়িপাতা ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বৃটেন ও বিশ্বজুড়ে তোলপাড় শুরু হওয়ায়, তার মালিকানাধীন 'নিউজ অব দ্যা ওয়ার্ল্ড' ১৬৮ বছরের পুরোনো এই পত্রিকা বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে সম্প্রতি।
বাংলাদেশেও মিডিয়া এখন একটি বিশেষ শক্তি। কর্পোরেট ব্যবসা এতোটাই ক্ষমতা রাখছে, যার ফলে অনেক অনিয়মই হয়ে উঠছে নিয়ম। অনেক অপশক্তিই হয়ে উঠছে অন্যতম ত্রাতা। আর ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিজ্ঞাপণ ও প্রচারণার ভাষা দেখলে নিয়মিত গা শিউরে উঠে ! বাহুমূলে ডিওডরেন্ট ব্যবহারের কৌশল-প্রণালী অথবা মোবাইল ফোন ব্যবহারের ন্যাকামি দেখলে মনে হয় আমাদের সমাজ ও সভ্যতা, অশ্লীলতার সীমা ছাড়িয়ে যেতে আর কত বাকী ! আর মিডিয়া দিয়ে দাপট তৈরির অন্য পৃষ্টাটি হচ্ছে , রিয়েল এষ্টেট ব্যবসার হাতিয়ার হিসেবে মিডিয়ার ব্যবহার। প্লট এবং ফ্ল্যাট ব্যবসার নামে নদী, শ্মশান, গোরস্থান, সবই দখলের যে চেষ্টা বাংলাদেশে চলছে, তার রক্ষক হিসেবে মিডিয়াকে রাখা হচ্ছে কবচ হিসেবে। এটা কারা করছে ? এদের পরিচয় কী ? তা সরকার ও জনগণের অজানা নয়।
বাংলাদেশে জনসংখ্যা এখন সাড়ে পনেরো কোটি। সেই দেশে দশ লাখ দৈনিক ছাপা হয় কিংবা চলে - এই বলে বড়াই করে দেশের 'সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক' টি। সত্যি কী সেলুকাস !
।।তিন।।
এবার আসা যাক আরেকটি প্রসঙ্গে। আমরা মিডিয়ার বিবর্তন চাইছি। মিডিয়ার নিরপেক্ষতা চাইছি। এই চাওয়ায়,মিডিয়ার সমান্তরালে বিকল্প মিডিয়া বা প্রতিমিডিয়া আমরা কোন গুলোকে বলবো ?
ইন্টারনেট ২৪ ঘন্টার সংবাদমাধ্যম এখন একটি চলিষ্ণু, আলোচিত সংবাদ মাধ্যম।ব্লগ, ফেসবুক, গুগলপ্লাস, টুইটার,ইত্যাদি ইন্টারনেট ভিত্তিক মিডিয়ার প্রসারও আমরা দেখছি খুব দ্রুত। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যুগে সংবাদপত্রের প্রভাব কমবে বলে অনেকেই মনে করছেন।
মানুষ সবকিছু তাৎক্ষণিকভাবে দেখে ফেলছে। জেনে যাচ্ছে। তাই সংবাদপত্রের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় দেখা সংবাদ পরদিন সংবাদপত্রে দেখলে তা তো বাসি ,ফ্যাকাশে মনে হবেই। অতীতে যা সংবাদপত্রে তরতাজা খবর ছিল এখন তা ইলেকট্রনিক মিডিয়া চ্যানেল টেলিভিশনে চলে এসেছে। তারপরও, প্রতিদিন ভোরে একটি দৈনিকের পাতায় চোখ বুলাবার আগ্রহ দেখাচ্ছেন বিশ্বের কোটি কোটি পাঠক। তাই প্রিন্ট মিডিয়া , ছাপা মিডিয়ার পুরোপুরি বিকল্প - তা বলা যাবে না।
আমরা দেখছি, কোনো কোনো ইন্টারনেট ভিত্তিক বাংলা মিডিয়া প্রচার করছে, '' আপনি যদি প্রতিদিন কাগজের দৈনিক পড়েন - তাহলে জেনে রাখুন আপনিও গাছ কাটছেন ! কারণ গাছ থেকে কাগজ তৈরি হয় ! '' এটাও এক ধরণের বানিজ্যিক প্রচারণা মাত্র।
উন্নত দেশগুলো যদি শুধুমাত্র ইলেক্ট্রনিক নির্ভর হতো , তাহলে বিশ্বের অনেক দেশেই, বিশেষ করে উন্নত বিশ্বে সংবাদপত্র উঠে যেতো। কারণ ওইসব দেশে টিভি চ্যানেলের ছড়াছড়ি, সেই তুলনায় আমাদের দেশে টিভি চ্যানেলের সংখ্যা অনেক কম। আমাদের প্রতিবেশী ভারতেও টিভি চ্যানেলের ছড়াছড়ি। পরিসংখ্যানে অনুযায়ী, ভারতে প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক চ্যানেল রয়েছে। অথচ সেই ভারতে সংবাদপত্রের পাঠকসংখ্যা হ্রাসের পরিবর্তে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ আমাদের দেশে এ সংখ্যা বাড়ছে না। দশ লাখ পাঠক নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে নবীন-প্রবীণ দৈনিক গুলো। বাংলাদেশে মিডিয়া হাউস তৈরির যে হিড়িক পড়ছে, তাতে কিছু সিনিয়র সাংবাদিক না না রকম বাড়তি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। কিন্তু উঠতি, তরুণ, শিক্ষানবিশ সাংবাদিক-সংবাদকর্মীদের কাজ করতে হচ্ছে হাড় ভাঙা খাটুনি দিয়ে। এর মাঝেই আমরা বেশ কজন প্রতিশ্রতিশীল সংবাদকর্মীকে হারিয়েছি। এই যে বিয়োগব্যথা তা উপশমে মিডিয়া হাউসগুলো কী কী করতে পারে তাও ভেবে দেখা দরকার।
আমরা দেখছি , নতুন অনেক মিডিয়ার জন্ম হলেও, গেল দুই দশকে বেশ কিছু সাংবাদিক নেতার জীবনমানের ধারা রাতারাতি বদলে গেলেও সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার উন্নয়ন হয় নি। বরং অবনতি হয়েছে। এ অবনতির কারণ সংবাদপত্রকে ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রভাব-প্রতিপত্তির হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তোলা। এ সময় অধিকাংশ পত্রিকায় পেশাদার সম্পাদকের পরিবর্তে আমরা দেখেছি মালিক-সম্পাদক। নয়তো আজ্ঞাবাহী কুশীলব সম্পাদক পদ দখল করে আছেন। যা কোনো দেশ, জাতি, সমাজের জন্য কল্যাণকর নয়। মঙ্গলজনক নয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ সাধনেও।
বলা খুবই দরকার, সাংবাদিকতার নামে জিম্মি করে রাখা, ভয় ভীতি দেখানো, টোপে ফেলে দেয়া, ব্ল্যাকমেইলিং করা - এমন হীন কাজও করছে 'সাংবাদিক' নামধারী কিছু মানুষ। আশার কথা এরা অতীতেও টেকে নি , ভবিষ্যতেও টিকবে না।
তবে বলে নিতে চাই , কিছু কালো টাকার মালিকরা ' আমি খাবো- তুমিও খাও' এমন নীতির সর্দারি করে এমন কিছু ফ্রাংকেনস্টাইন তৈরি করেছেন এবং করছেন তো বটেই। আর ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্লগগুলোর মাঝে রয়েছে আরেক ধরনের তস্করবৃত্তি। সেখানে অনেকেই 'ছদ্মনামে' ৩০/৪০ টি একাউন্ট খোলে যাচ্ছেতাই লেখালেখি করে। ব্লগে যেহেতু অন্যের লেখায় মন্তব্য করা যায়, তাই সংঘবদ্ধভাবে এরা হামলে পড়ে অন্য সৃজনশীল কোনো লেখকের উপর। এদের অধিকাংশরাই ক্রিয়েটিভ কোনো মন্তব্য করে না, করতে চায় না। তাছাড়া রাজনৈতিক মতবাদ প্রতিষ্টার নগ্ন প্রচেষ্টার নামে এরা কেউ কেউ মহান মুক্তিসংগ্রাম, জাতিসত্তা, জাতীয় সংস্কৃতিকেও কটাক্ষ করতে কসুর করে না। ফেসবুক, ব্লগ এমন কিছু কথিত বিক্ল্প মিডিয়া' তাই হয়ে উঠছে কাদা ছুড়াছুড়ির অন্যতম প্লাটফর্ম। যা বেদনাদায়ক , লজ্জাজনক। কেউ কারো বিপক্ষে কিছু বললে তাকে ইমেলে 'ভাইরাস' পাঠিয়ে আক্রমণও করা হচ্ছে । প্রতিমিডিয়ার এই মধ্যসত্ত্বভোগিরা নিজেদের নাম-পরিচয় গোপন করে কর্দমাক্ত করছে ভার্চুয়াল জগতকে। কথায় প্রচলিত আছে, মিডিয়া তিলকে তাল করতে পারে। এই মিডিয়া জগত এখন খলনায়কদের স্বর্গরাজ্য। দেশে - বিদেশে । রাজনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজ, অর্থনীতি সবই নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে কিছু মিডিয়া মালিক। পাঠক-পাঠিকাকে সত্য খুঁজতে হবে। সত্যের পক্ষে থাকতে হবে। কারণ বিবেচনাবোধই পারে সামাজিক সকল অপশক্তিকে তাড়াতে।
নিউইয়র্ক,৩ আগষ্ট ২০১১
---------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ / ঢাকা/ ৬ আগষ্ট ২০১১ শনিবার



Tuesday, April 5, 2011

ছিন্নভিন্ন গোলপাতা



ছিন্নভিন্ন গোলপাতা
----------------------------

গোলার আঘাতে ছিন্নভিন্ন গোলপাতা। ক'টা শালুক হাতে
কিশোরীর লাশ।অনেকটা বেআব্রু । পড়ে আছে মাথার খুলি,
সারি সারি । হঠাৎ হায়েনার থাবায় কেঁপে উঠে বাংলার আকাশ।
পঁচিশে মার্চের কালোরাত দখল করে নেয় পশ্চিমা শকুন।

আমরা একটি ভূখন্ড নির্মাণে তুলি সমবেত হাত। প্রভাত ছিনিয়ে
নেবো বলে , উদ্বাস্তু তাঁবুর নীচে শানাই সঙ্গিন।

আমরা হারি নি কখনো। পূর্বপূরুষের গুল্মশক্তি বয়ে হয়ে উঠি
সিংহমানব-ব্যাঘ্রমানবী।
প্রয়োজনে ভস্ম হতে জানি , যুদ্ধমাদল বাজিয়ে ক্রমশ: বাড়িয়ে
যাই মেঘের বিস্তার।
হয়তো রক্তবৃষ্টি নামবে। তবু আমরাই জয়ী হবো , রুদ্রাক্ষ জোসনায়।

তিনটি সাম্প্রতিক কবিতা




তিনটি সাম্প্রতিক কবিতা
===================

মধ্যাহ্নের সাথে আলাপ
--------------------------

নগ্ন আকাশ দেখি দ্বিতীয় আভায় প্রাচীন পতঙ্গগুলো গোল
হয়ে তাকাচ্ছে সেই নগ্নতার দিকে আমি দর্শক নই , তবু
উঁকি দিয়ে দেখি, কারা এসে মিলিত হয়েছে এই আশ্রম
সীমানায় কীভাবে লিখিত হচ্ছে বিশ্রামের তন্দ্রানিয়মাবলী

আরো এসেছেন দেখতে যারা , তারা সবাই বিশিষ্ট নাট্যজন
নীড় নিয়ে খেলা করাই কাজ তাদের কখনও হাসিয়ে যান
কখনও কাঁদার দরোজা উন্মুক্ত করে দেন অবারিত হাতে
তাদেরকেও দেখে নিয়ে আমি, নেমে যাই চর্যাপদ কুড়াতে


জমিয়ে রেখেছি কটি পিনপতনের শব্দ হাতে আছে কফির
গরম ধোঁয়া নিম্নগামী তারা ছুঁয়ে যাচ্ছে যে টিয়ে পাখি ,তাকে
প্রশ্ন করছি গন্তব্য জানতে চেয়েমাঝে মাঝে আমি এমন অনেক
কিছুই জানতে চাই বৈশাখী তান্ডবের কাছে, শ্বেতাঙ্গ সমুদ্র
আর কালো পাহাড়ের কাছে মর্ত্যমনন এসে আমাকে বোধ
হয় সে জন্যই দেয় পাহারা যাতে উন্মত্ত না হই কিন্তু তার
পরও তো আমাকে কেউ থামাতে পারে না , যখন বলি তোমাকে –
বিছিয়ে দাও উত্তপ্ত জমিন কয়েকটি মধ্যাহ্ন চাষ করে যাবো


মনমিশ্রণ

------------
পুরু কাঁচের ছায়া নিয়ে খেলছে সূর্য চাঁদের যৌনজীবন
নিয়ে শেষ কবিতাটি লেখা হচ্ছে মনিষার হাতে ব্যাংলোর
নগরে বসে সে ই নিয়ন্ত্রণ করছে সবটুকু নির্জন গৌরব

যারা শিখেছে উপস্থাপনবিদ্যা , তারাই পারছে আজকাল
সবকিছু, পারছে সূর্যকেই গিলিয়ে দিতে কয়েকফোটা
মেঘ আর প্রকাশ্যে গাইছে সিটিসেলের মুগ্ধ জয়গান

মানুষ কীর্তনের সন্ধ্যাকে কখনো নিজের প্রশস্থিগীতি
বলেই মনে করে মদমিশ্রণে মনকে ডুবিয়ে দিয়ে
বার বার উপলব্ধি করতে চায় মিলননাট্যের সুপ্ত আবহাওয়া


সূত্র সমীপে লিখি বিনয় বন্দনা

-------------------------------------
বদলে দেবার প্রত্যয় নিয়ে লিখি স্রোতজ সূত্র আরেকবার মুগ্ধ
হয়ে দেখি অর্জনের বৃহস্পতি গ্রহগুলো আমার বলয় থেকে পালিয়ে
ছিলো এতদিন আজ আমি নাগালে পেয়ে এর মাঝে খুঁজে ফিরি
হারানো উত্থানের মুখ

আমার সহযাত্রী যারা , তারা এর আগে লিখে গেছে তাদের প্রাপ্তি
নিয়মাবলী হাতের কোদাল দিয়ে মাটি কেটে গড়েছে পুষ্পদ্বীপ
সেখানে লাগিয়েছে গোলাপের চারা পাহারা দিয়ে ফুটিয়েছে ফুল

সূত্র সমীপে আমি লিখি সেই বিনয় বন্দনা, ছুঁয়ে যেতে পরাগ সমূল…

ফকির ইলিয়াস এর একগুচ্ছ কবিতা




ফকির ইলিয়াস এর একগুচ্ছ কবিতা









প্রত্যক্ষ সম্বন্ধ ও দুর্ভিক্ষবিষয়ক সেমিনার

----------------------------------------------
নীতি নির্ধারণী বৈঠকের বনভোজনে আমরা আমন্ত্রিত হয়েছি
এই দ্বিতীয়বার। ‘গ্রীনহর্স’­ ব্র্যান্ডের সাথে আমাদের প্রত্যক্ষ
সম্বন্ধ বেড়ে উঠেছে এভাবেই। যেভাবে পাঁজরবিহীন কোনো
সূর্যাহত কৃষক সন্তান বেড়ে উঠে সমান্তরাল। কাল-আকালের
বৃষ্টিছন্দ মাড়িয়ে। তারপর মাটির প্রচ্ছদে আঁকে নিজের ছবি।
কবি হলে লিখতে পারতো বিরহের কবিতা।
মঙ্গার মাদুর জড়ানো জীবনের জলকলা। বন্দনার দগ্ধ বিধুরতা।
ছাদহীন, চাঁদহীন শৈশবের পথধরে গড়ে উঠা প্রথার বিরুদ্ধে প্রথা।

সরল সলতেকথা
----------------------
আনন্দের উত্থান দেখি ঢেউয়ের মননে। চিনে রাখি এইসব
লঘু রোদের ঋতি। ইতি টেনে এসেছি সকল মৌন বৈভবের।
কালের কলতানে হারিয়ে গেছে যে গান, তারও স্বরলিপি খুঁজে
বাজাই এস্রাজ। সাজ , সম্ভাষণ সব ভুলে সমবেত হই সকালের
অমোঘ শয্যায়। প্রায় প্রতিভোরে যে পাখি পালক ফেলে যায় ,
আমি করি তারও সন্ধান। প্রাণের আগুনে জ্বালাই সলতের সুতো।
দ্রুত চলে যাই মেঘনার বিমুগ্ধ মোহনায়।দেখি আহত পাখিটি উড়ে যায় ..


ধানী জমির ধ্যানে মগ্ন যে জীবনের গান
...............................................................................

তোমার প্রিয় তালিকায় আমার নাম নেই , তা আমি দেখেছি। কিংবা তোমার লিংক সাম্রাজ্যে নেই আমার নীড়ছবি। তাও অজানা নয় আমার। মেরু বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠক সেরে ষ্টকহোম থেকে ফেরার পথে ওর সাথে নিবিড় দেখা হয়েছিল আমার। বলেছিলো, বোষ্টনে যাচ্ছি। ঘুরতে। বলেছিলাম, ফেরার পথে নিউইয়র্কের মিউজিয়াম অব ন্যাশনাল হেরিটেজ দেখে যাবার আমন্ত্রণ রইলো।

এর ঠিক তিনদিন পর বেজে ওঠে ফোন। সেই পরিচিত কন্ঠ। সময় হবে ? প্রশ্ন শোনে সেরে নিই প্রস্তুতি পর্ব। তারপর দেখা হয়ে যায়। আবারও শোনাই পাল তোলা নৌকোর গল্প। ধানী জমির ধ্যানে মগ্ন জীবনের গান। ও আমার গল্প শোনে তন্ময় হয়ে।

মানুষকে এভাবেই তন্ময় হয়ে যেতে হয়।আর পুঁজিতে জমা রাখতে হয় সমুদ্রের ফেনা।এই পৃথিবী আবার ফিরবে কালের জোয়ারে, সেরে নিতে সব লেনাদেনা।


তবে কী গৃহীত হবো না-------------------------------
দুপুরের দরোজা খুলতেই দেখি, আমার বুকের
ভেতরে ঢুকে পড়ছে একটুকরো মেঘ। জমাট সূর্য
তার অসমাপ্ত সত্ত্ব নিয়ে লিখাচ্ছে নাম ঘাসের পাঁজরে,
আর বুড়ো নদী তার প্রাগৈতিহাসিক তারুণ্য ধারণ
করে জানাচ্ছে প্রণাম জলকে , জলাশয়কে।

পকেটে কলমের কংকাল দেখে আমিও স্মরণ করতে
চাইছি আমার পুরো নাম। ঠিকানার প্রাচীন ইতিহাস।
এর আগে ছিলাম কোথায়, ইত্যাদি সময়ের রূপরেখা।
আর ভাবছি যে ইট একদিন নিজে পোড়ে , স্তরে স্তরে
সাজিয়েছিল দালান – সেই ইমারতের আলোয় যে
মানব- মানবী দাঁড়িয়ে আজ করছে প্রেমালাপ, তাদের
পূর্বসূরিরা কী তাকিয়েছিল পশ্চিম আকাশে – ভেসে যাওয়া
মেঘ দেখার সবুজ অপেক্ষায় !
অথবা এটাও ভাবছি বলা যায়, যে হেমন্ত মাঠের আঙিনায়
একটি দোয়েল ছায়া খুঁজে করছে বিলাপ
তার মতোই , আমিও কী এই মাঠালয়ে আরেকজন বন্দী
হিসেবে কখনওই গৃহীত হবো না !

Friday, July 23, 2010

পথপরাগ














আমার জন্য পাঠিয়ে দিও কয়েকটি পথ
ভিন্ন সড়ক ধরে আমি হেঁটে যাবো অনিল অন্দরে
তারপর শিশিরের ঘ্রাণ নিয়ে বৃহৎ
সমুদ্রগুলোকে বলে দেবো , তোমরাও কি ভুল করে
এসেছো এ পথে - না হলে তো দেখা হবার
কথা ছিল না কোনো কালে
তবে কি প্রেম মানেই শংকার
হামাগুড়ি, ভস্ম যেমন আলো দিয়ে জ্বলে।

আমাকে পাঠিয়ে দিও কয়েকটি পরাগ
যা নিয়ে আমি বেঁচে থাকতে পারি অন্ততঃ
আরো কিছুকাল এবং মনের দীনতাটুকু পরিত্যাগ
করে বলতে পারি , এখনো হইনি গত
বিধবা সন্ধ্যার ছায়ায়। আসলে পৃথিবীটাই বিধবা কি না !
সে জন্যেই ভাটি এবং উজানের পার্থক্য
কেউ কেউ বুঝে , সবাই পারে না
গড়ে যেতে, বৃষ্টি ও বিরহের মাঝে সরল ঐক্য ।

Saturday, October 17, 2009

চারাপ্রথা


চারাপ্রথা
========
(কবি আবু মকসুদ প্রীতিভাজনেষু )


জোনাকীরা বড় সাধ করে পরে নেয় তিথিথান। ওরা জ্বলে
এবং আলো দিয়ে ভাসিয়ে দেয় চন্দ্রের প্রস্থানপথ। আমি
চেয়ে থাকি । আর পাঠ করি বর্ষার বীজবাক্য। চাওয়ার খুব
বেশী কিছু নেই। ঘাটে নোঙর ভিড়িয়ে যে মাঝি নদীতীরেই
করছে জলপান, আমি তার সহযাত্রী হবার জন্য হাত বাড়াই।
হাত দুটি খালি ফিরে আসে। ভেসে গেলে পদ্মও রেখে যায়
তার ছায়াগন্ধ। তার চারপাশে বিলি কাটে ক'টি ভ্রমণ বিলাসী
দিন। উন্মেষ ছড়াবে বলে আষাঢ় ও বিছিয়ে দেয় তার দিঘীদেহ।
আমি তারও পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে স্পর্শ করি রোদের আল। কাছে
আসে আরো কিছু বিন্দুবিষাদ। চারাপ্রথায়,বিভাজিত হই।একটা
শিকড়, পাতাল ছুঁবে বলে সাকিনে ফিরে -আর খুঁজে রঙের অথই ।

ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও সুনিশ্চিত সুশাসন
ফকির ইলিয়াস
----------------------------------------------------------------
রাষ্ট্রের মালিক জনগণ, শ্লোগানটি বেশ পরিচিত। তা বলেন অনেকেই। প্রায় প্রতিটি দলের ম্যানিফেস্টোতে সে কথাটি আছে। কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশে জনগণের প্রত্যাশায় কি রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিচালিত হয়? না, হয় না। আর হয় না বলেই শাসক শ্রেণীর আশপাশে তোষামোদকারী ফড়িয়া শ্রেণী ভিড়তে পারে। স্বার্থবাদী একটি পক্ষ কলুষিত করতে পারে মানুষের স্বপ্নকে।
বাংলাদেশে একটি বিতর্ক এখন বেশ তুঙ্গে। তা হচ্ছে, উপজেলা চেয়ারম্যান বনাম স্থানীয় সাংসদদের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। কে কি করবেন, সেই রুটিন নিয়েও চলছে মতবিরোধ। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে দুটি পদই সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত। সাংসদ এবং উপজেলা চেয়ারম্যান দু'জনই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তারপরও স্থানীয় সাংসদরা একটা বিশেষ দাপট দেখাবার প্রয়াসী হচ্ছেন। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে তারা সরাকরের সহযোগিতাও পাচ্ছেন বেশি।
এই যে দ্বন্দ্ব, এর প্রধান কারণটি হচ্ছে রাজনৈতিক দলবাজির প্রভাব। যেহেতু উপজেলা তথা স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার জনপ্রতিনিধিরা সরাসরি রাজনৈতিক দলের ব্যানারে নির্বাচন করতে পারেন না, তাই তারা সে পরিচয়ও দিতে পারেন না। আর সেই সুযোগ কাজে লাগান দলীয় সাংসদরা। ফলে স্থানীয় সাংসদ এবং উপজেলা চেয়ারম্যানদের মাঝে যে ঐক্য গড়ে ওঠার কথা ছিল, তা ওঠেনি কিংবা উঠছে না। দ্বন্দ্বটা সেভাবেই প্রকাশ্যে রূপ নিচ্ছে।
বিশ্বের উন্নত অনেক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দু'স্তর বিশিষ্ট জনপ্রতিনিধি প্রথা চালু রয়েছে। ভারতে রয়েছে স্থানীয়-প্রাদেশিক প্রশাসন। আর রয়েছে কেন্দ্রীয় (ফেডারেল) প্রশাসন। একই অবস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও। কংগ্রেসম্যান এবং সিনেটর প্রথার পাশাপাশি রয়েছে স্টেট গভর্নমেন্ট এবং ফেডারেল গভর্নমেন্ট। প্রতিটি স্টেটেও রয়েছে স্টেট সিনেটর, স্টেট কংগ্রেসম্যান প্রথা। এই যে দু'স্তর বিশিষ্ট প্রতিনিধি হাউজ, সেখানে কিন্তু এক পক্ষের সঙ্গে অন্য পক্ষের কোন বৈরিতা নেই। কেন নেই? কারণ দু'টি পক্ষই রাষ্ট্র এবং সুশাসনের পক্ষে ক্ষমতা প্রয়োগে বিশ্বাসী।

সেখানে দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের কোন সুযোগ এবং ইচ্ছা কারোরই নেই। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এই রাজনৈতিক সম্প্রীতিই জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার বিশেষ সহায়ক হয়েছে। খুলে দিয়েছে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের প্রশস্ত পথ।
প্রায় পনেরো কোটি মানুষের বাংলাদেশে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং তৃণমূল পর্যায়ে গণমানুষের স্বপ্ন পূরণের কথাটি অনেক সংগঠনই বলে আসছে। এর বাস্তবায়নে কাজ করা প্রয়োজন। কারণ মজবুত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত না হলে গ্রামীণ জনপদ তথা গোটা রাষ্ট্রের মৌলিক অবকাঠামোর উন্নয়ন সম্ভব নয়।

আমার জানা মতে, স্থানীয় সরকার বিষয়ে দীর্ঘ প্রায় বিশ বছর ধরে কাজ করছেন একজন সংগঠক, গবেষক। তার নাম আবু তালেব। তিনি যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসী হলেও, বাংলাদেশের মানব সম্পদ ও স্থানীয় সরকারের উন্নয়নে নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।
অতি সম্প্রতি তার প্রতিষ্ঠিত অর্গানাইজেশন 'সেন্টার ফর ডেমেক্রেটিক লোকাল গভার্নেন্স'-এর পক্ষে একটি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ শুরু করেছেন নির্বাহী পরিচালক আবু তালেব। আর তা হচ্ছে- 'গণস্বপ্ন ২০২০ : উন্নত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ - ২০২০'।
সংগঠনটি যে সব দাবিগুলোর বাস্তবায়ন চেয়ে বর্তমান সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে তার প্রধান কিছু দাবির সঙ্গে সহ মত পোষণ করে আলোচনায় যেতে চাই।

ক. যত দ্রুত সম্ভব স্থানীয় সরকারের অধীনে সব নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এর বিভিন্ন ধারা সংশোধন করে গণমুখী নীতি প্রণয়ন করতে হবে।

খ. ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়ণ সুনিশ্চিত এবং সমানুপাত করতে হবে। তাদের জন্য সরকারি ভোটের ব্যবস্থা করতে হবে।

গ. ইউনিয়নের সংখ্যা ৪৪৯৮টি থেকে কমিয়ে ৩০০০টিতে এনে সিস্টেম কস্ট হ্রাস করার উদ্যোগ নিতে হবে। সব স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনের মেয়াদ চার বছর করতে হবে।

ঘ. কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাচিত এবং অনির্বাচিত কর্মকর্তাদের জাতীয় এবং বৈশ্বিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকারগুলোর দায়িত্ব পালনে গঠনমূলক সহযোগিতা দিতে হবে।

মোট সতেরো দফা দাবিনামার পক্ষে কাজ করছে সংগঠনটি যদিও সব ক'টি দাবি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মানা সম্ভব নয়। কোন সরকার তা মানবেও না।
কতটা জনগণ সংশ্লিষ্ট হলে একটা দাবি জাতীয় সংসদে পাস হয়_ তার উদাহরণ বাংলাদেশের মানুষের অজানা নয়। যে সব সাংসদ জাতীয় সংসদকে সব প্রত্যাশার কেন্দ্র বিন্দু বলে দাবি করেন, সেই সংসদেই কোরাম সঙ্কট দেখা দেয়। বাংলাদেশে তা নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার।

বাংলাদেশে স্থানীয় সরকারকে গণমুখী করলে কিংবা করতে পারলেই গণতন্ত্রের চর্চা এবং ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে সন্দেহ নেই।

কিন্তু এর প্রধান অন্তরায় হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। কিছু কিছু শীর্ষ নেতাকে বলতেও শুনেছি, স্থানীয় পর্যায়ে সবল নেতৃত্ব বৃদ্ধি পেলে তাদের নিজেদের জন্যই নাকি 'ফ্রাংকেনস্টাইন' তৈরি হয়। তাই তারাই কেন্দ্রে অবস্থান করে সব কলকাঠি নাড়তে চান। এবং নেড়েও যাচ্ছেন।
বর্তমান জাতীয় সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে আওয়ামী লীগের। অতি সম্প্রতি আমরা দেখলাম স্পীকার আবদুল হামিদ নিজের দলের, নিজের সরকারের, সংসদে উপস্থিতি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তা নিয়ে বিরোধীদল সমালোচনার মওকাও পেয়েছে। এর জবাবে পাটমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, স্পিকার মহান সংসদের প্রভু নন, সেবক।
তাদের এই বচসা যদি লোক দেখানো না হয়, তাহলে তো আমরা ধরে নিতে পারি সরকারের ভেতরে একটা নীরব স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। এটা কিসের লক্ষণ?
মন্ত্রীরা রাষ্ট্রীয় কাজকর্মে ব্যস্ত থাকায় সংসদে আসতে পারবেন না বা পারেননি, এমন অজুহাত থাকতেই পারে। কিন্তু এর সমন্বয় সাধিত হচ্ছে না কেন?

প্রধান বিরোধীদল সংসদে আসছে না। ছাড় দিয়ে হলেও এই বিষয়টি সমাধান করা উচিত সরকার পক্ষের। কারণ জনগণের জন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মানতে হবে সর্বাগ্রে।
নিউইয়র্ক, ১৩ অক্টোবর ২০০৯।
-----------------------------------------------------------------------
দৈনিক সংবাদ ।ঢাকা । ১৬ অক্টোবর ২০০৯ শুক্রবার প্রকাশিত